সেল মি দিস পেন – রাসেল এ কাউসার

সম্প্রতিকালে বাংলা ভাষায় লেখা সেলফ হেল্প বই গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাসেল এ কাউসার-এর “সেল মি দিস পেন” বইটি। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বইটি অনেক কাজের। পার্সোনাল গ্রোথ, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ক্যারিয়ার গ্রোথ, বিজনেস গ্রোথ, পার্সোনাল ফাইন্যান্স, প্রোডাক্টিভিটি ম্যানেজমেন্ট, এই সব কিছুর একটা মিশেল আছে বইটিতে। 

মোটা দাগে বলতে গেলে রাসেল এ কাউসার একজন উদ্যোক্তা। যিনি একাধারে ডিজিটাল মার্কেটার, লেখক এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরও। তার লেখা “সেল মি দিস পেন” বইটিতে আপনি সেলফ হেল্প রিলেটেড বিভিন্ন হ্যাক পেয়ে যাবেন। যার মাধ্যমে আপনি আপনার লক্ষ্য নির্ধারণসহ লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারটিও সহজে অর্জন করতে পারবেন। খুব সহজ, বাস্তবিক এবং ছোট ছোট অধ্যায়ে লেখা “সেল মি দিস পেন” বইটি পড়তে গিয়ে আমার মনে হয় আপনি একবারের জন্যও বিরক্ত হবেন না। এবং প্রতিটা অধ্যায় পড়ার পর আপনি নিজের সাথে অনেক কিছু মিলিয়ে উপলব্ধি করতে পারবেন। যা আপনাকে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্লেষণ করতে সহায়তা করবে। 

ছবিতেঃ “সেল মি দিস পেন” বইয়ের লেখক রাসেল এ কাউসার।

আপনার পার্সোনাল গ্রোথ নিয়ে বইটিতে অনেকগুলো হ্যাক দেওয়া আছে। কিভাবে আপনি কোন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করবেন, তা হোক কোন একটা ভাষা শিখা অথবা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখা, এই ব্যাপারেও দেওয়া আছে চমৎকার কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস। আপনার ক্যারিয়ার গ্রোথ হ্যাক করার ব্যাপারেও বইটিতে লেখা হয়েছে বিশদভাবে। বিজনেস গ্রোথ নিয়েও লেখা হয়েছে “সেল মি দিস পেন” বইটিতে। পার্সোনাল ফাইন্যান্স ম্যানেজ করার জন্যও দেওয়া আছে কিছু কার্যকর রসদ। বইটি পড়লে আপনি ওভারল প্রোডাক্টিভিটি ম্যানেজমেন্ট করার জন্য অনেক কিছুই জানতে এবং শিখতে পারবেন। 

একটা অধ্যায় পড়বেন এবং কিছুক্ষণ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করবেন, নোট করবেন, লেখালেখি করবেন তারপর আরেকটি অধ্যায় যাবেন। এরকম করতে করতে আপনি একটা সময় বইটি যখন শেষ করবেন তখন উপলব্ধি করবেন, যে আপনার ভালো একটি সময় কেটেছে। তবে আমি আপনাকে অবশ্যই বলবো বইটি পড়ার সময় একটি নোট খাতা এবং একটি কলম নিয়ে বসতে। প্রতিটা অধ্যায় পড়ার পর আপনার সাথে মিলিয়ে কিছু প্ল্যান নোট করে ফেললে বইটি পড়ার পর আপনি আপনার মোটামুটি একটা লক্ষ্য পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলতে পারবেন। যেটি ধরে আপনি আপনার সেলফ ডেভেলপমেন্ট-এর কাজ শুরু করতে পারবেন। বইটি পড়তে গিয়ে কিছু কিছু সময় আপনি আপনার SWOT অ্যানালাইসিস করার সুযোগও পেয়ে যাবেন। যার মাধ্যমে আপনি আপনার শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি সম্পর্কে প্রায় পরিষ্কার একটি ধারনা লাভ করবেন। 

বইটি পড়তে গিয়ে আপনার কাছে প্রায় সময় মনে হবে যে এখানে মার্কেটিং শিখানো হচ্ছে। আসলে এটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ বইটির লেখক আপাতমস্তক একজন মার্কেটিং-এর মানুষ। সেই ক্ষেত্রে তার লেখা বইয়ে আপনি মার্কেটিং-এর নির্যাস পাবেন এটাই স্বাভাবিক। বইটিতে আপনি পাবেন সেলফ ব্রান্ডিং করার মত অনেকগুলো হ্যাক। যেগুলো আপনার সেলফ ব্র্যান্ডিং করার অনেকগুলো দ্বার উন্মোচন করে দিবে বলে আমার বিশ্বাস। যেহেতু লেখক একজন মার্কেটিং-এর মানুষ তাই আমার মনে হয় সে বইটি এমন কৌশলে লিখেছে যাতে করে তার পাঠক বইটি পড়তে গিয়ে বিরক্ত না হয়। সে তার টার্গেট গ্রুপের সাইকোলজি বুঝে বইয়ের অধ্যায়গুলো এবং লেখাগুলো ডিজাইন করেছে বলে আমার মনে হয়েছে। যাতে করে পাঠক আনন্দ করে বইটি পড়তে পারে। 

বইটিতে বাস্তবসম্মত অনেকগুলো কেস স্টাডি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পাঠক খুব সহজেই লেখক যে কনসেপ্টটি বোঝাতে চেয়েছে সেটি বুঝতে পারবে। এবং কেস স্টাডি গুলো খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, পড়তে এবং বুঝতে যাতে বেশি কষ্ট না হয়। বইয়ের অধ্যায়গুলোর নামকরণ করা হয়েছে খুব চমৎকার এবং মজাদার ভাবে। যাতে করে অধ্যায়ের নাম দেখলেই পুরো অধ্যায়টা পড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। এটা অবশ্য লেখকের মুন্সিয়ানা। তবে বইয়ের অনেকগুলো অধ্যায় আছে যে অধ্যায়গুলো পড়লে মনে হয়, এই লেখাটা এত তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেওয়া হলো কেন! এটা নিয়ে আরো ব্যাখ্যা -বিশ্লেষণ করলে ভালো হতো। কিছু কিছু অধ্যায়ে যে কনসেপ্টটি বুঝানো হয়েছে সেটা নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখলে মনে হয় ভালো হতো। তবে এটা আমি বলতে পারি, বইটি পড়ে একেবারেই অতৃপ্ত থাকার তেমন একটা সুযোগ নেই। 

“সেল মি দিস পেন” পড়তে ছবিতে ক্লিক করুন!

বইটিতে উল্লেখ্য একটি কথার আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। তা হলো, 

“Don’t sell the feature, Sell the benefit” 

এর মানে আপনি যদি কোন কিছু বিক্রি করতে চান তাহলে ঐ জিনিসটির বৈশিষ্ট্য গুলো বিক্রি না করে আপনি ঐ জিনিসটি কিনলে ক্রেতার কি লাভ হবে সেটা বলুন। এটা আপনি কোন পণ্য বিক্রয় করুন অথবা নিজেকে। 

বর্তমানের খুবই চাহিদাপূর্ণ একটি স্কিল হলো বিক্রয় করার স্কিল। আপনি যদি একজন ভালো বিক্রেতা হোন তাহলে আপনার বেকার থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন খুব কম প্রতিষ্ঠানই আছে যেখানে গিয়ে যদি আপনি বলেন যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বাড়িয়ে দিতে পারব এবং আপনি যদি যথার্থ পরিকল্পনা দেখাতে পারেন তাহলে আপনাকে তারা খালি মুখে ফিরিয়ে দিবে। মজার বিষয় হলো “সেল মি দিস পেন” বইটির নামকরণ থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ে কোন না কোন ভাবে আপনাকে বিক্রয় করার ব্যাপারটি শেখানো হয়েছে। যেই ব্যাপারটি রপ্ত করতে পারলে বর্তমান বাজারে আপনি নিজেকে অনেক বেশি চাহিদাপূর্ণ করে তুলতে পারবেন। 

আমার মনে হয় আপনি যদি সেলফ হেল্প ধরণের বইগুলো পড়তে পছন্দ করে থাকেন তাহলে আপনার “সেল মি দিস পেন” বইটি পড়া উচিত। বিশেষ করে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আমি এই বইটি রিকুমেন্ট করতেই পারি। লেখক এর জন্য শুভকামনা জানিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি। 

পড়ুন, জীবনকে উদ্‌যাপন করুন! 


  • বইঃ সেল মি দিস পেন 
  • লেখকঃ রাসেল এ কাউসার 
  • প্রচ্ছদঃ মো. পারভেজ হোসেন 
  • প্রকাশনঃ অন্বেষা প্রকাশন 
  • পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৭৬ 
  • প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে বইমেলা, ২০২১ 
  • পার্সোনাল রেটিংঃ ৮/১০ 
  • রিভিউ লিখেছেনঃ ইমরান হোসেন 

1 thought on “সেল মি দিস পেন – রাসেল এ কাউসার”

  1. রাসেল এ কাউসারের “সেল মি দিস পেন” সেলফ হেল্প, ক্যারিয়ার গ্রোথ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে লেখা অনুপ্রেরণামূলক বই। সহজ ভাষা, ছোট অধ্যায় ও বাস্তব কেস স্টাডি বইটিকে আকর্ষণীয় করেছে। সেলফ ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং কৌশল শেখার জন্য এটি দারুণ গাইড। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top